আমি তোমাদের কবি—তোমরা আমাকে নাও
ছায়াঢাকা গাঁয়ের মাটির মসজিদ—সুরেলা আজান
প্রাচীন মন্দির, উলুধ্বনি, কীর্তন, গাজনের গান
পুরোনো গির্জার ঘণ্টা, প্রণত প্রার্থনা, যিশুর বন্দনা
কিয়াঙে কিয়াঙে জোড়হাতে– বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি…
লাল হালখাতা, হাওয়াই মিঠাই, চিনির হাতি-ঘোড়া
কুমোরের চাকা, মাটির পুতুল, ঢেঁকিতে গাঁয়ের বধূ
নাগরদোলার ঘূর্ণি, রাতভর যাত্রাপালা, লালনের গান
কবি নজরুল-রবীন্দ্রনাথ, বঙ্গবন্ধু মুজিবের মুখ;
রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, শোকার্ত প্রভাতফেরি
ঊনসত্তুরের গণ–অভ্যুত্থান—আসাদের রক্তমাখা শার্ট;
সাতই মার্চের রেসকোর্স, জয় বাংলা, মুক্তিযুদ্ধ
লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তেভেজা প্রিয় স্বাধীনতা;
আমি তোমাদের কবি—তোমরা আমাকে নাও।
চৈত্রের হাওয়া, আড়বাঁশি—বিদায়বেলার সুর
বিরহ-বেদনা, পাপ-তাপ, মেঘ, বৃষ্টি, ভোর
মৃদুমন্দ বসন্তের বাতাস, নতুন কচিপাতা
মউ মউ আমের মুকুল, মাতাল মৌমাছি;
পদ্মার ইলিশ, হালদার পোয়াতি কাতলা, রুই;
কপোতাক্ষের মধুসূদন, ব্রহ্মপুত্রের অষ্টমী-স্নান
মেঘনার ঢেউ; যমুনার ভয়াল ভাঙন–ঘোলা জল
মাতৃসমা নদ-নদীর উর্বর পলি, শস্যের সুষমা;
সবুজ ধানের ক্ষেতে বাতাসের দোলা, মাঠের কিষান
জারি-সারি-কবিগান—অথই হাওরে উদাস সুরের টান
হাওয়ায় থিরথির বিলের কলমি, কচুরিপানার ফুল
হিজলের ডালে খয়েরি শালিখ, বাঁশঝাড়ে সাদা বক;
আমাকে তোমরা নাও—আমি তোমাদের কবি।
পহেলা বৈশাখ, ঈদ, দুর্গাপূজা, বড়দিন, বুদ্ধপূর্ণিমা
নৌকার বহর, পালের বাতাসে ভাটিয়ালি, মারফতি
পাহাড়ের ঝরনার গায়ে বিহু, সাংরাই– জলকেলি
কিশোরীর নতুন পিরান, পাঁচনের ঘ্রাণ, পিঠাপুলি;
আউশের ফেনাভাত, পাটশাক, শজনের ডাঁটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ, ঝড়ে পড়া কাঁচা আম
কাজলি মাছের ঝোল, চলন বিলের কই
বাটির পায়েস, ডালায় বিন্নির খই, ঘরেপাতা দই;
চারুমুখী মেয়েটির দুরন্ত কৈশোর–কপালের কাটা দাগ
রঙিন কাচের চুড়ি, মাটির গয়না, রুপোর নোলক
লাল-নীল-বেগুনি পুঁতির মালা, খোঁপার শাপলা
পরনে বাহারি শাড়ি, কালো টিপ, লাল ঠোঁট–
এই তো শ্যামল বাংলার রূপ—আমি আঁকি সেই ছবি
আমাকে তোমরা নাও—আমি তোমাদের কবি।