ঢাকারবিবার, ১লা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউপি নির্বাচনে জনগনের রায়কে পাল্টে দেবার ষড়যন্ত্র!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ডিসেম্বর ৬, ২০২১ ৩:৫৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ঢাকা জেলার একটি ইউনিয়নে নির্বাচন ঘিরে তৈরি হয়েছে স্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। বিএনপির ঘাটিঁ বলে পরিচিত কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে নৌকাকে হারিয়ে স্বতন্ত্র পরিচয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে জয়ী বলে ঘোষণার পর রহস্যজনক ভাবে ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। তারপর থেকেই জনগনের বিপুল সমর্থন আর আবেগকে পিষে ফেলতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিদ্রোহী ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য বহিষ্কৃত হযরতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন।


বাংলালাইভের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি অনুসরণ করুন

তিনি বলেছেন, “ প্রকাশ্যে আর অন্তরালে চলছে এই ষড়যন্ত্র। যে ষড়যন্ত্র জনগনের বিজয় ছিনিয়ে নেবার ষড়যন্ত্র। নানা কারসাজি করে ফলাফল পাল্টে দেবার নীল নকশার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। তবে কোন ষড়যন্ত্র করেই জনগনকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। আমরা ধৈর্য্য ধারন করে অপেক্ষা করছি। যে কোন অশুভ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্যে জনগনই যথেষ্ঠ”।

সারাদেশে তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে কেরাণীগঞ্জের ১১টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৮টি ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি তিনটি ইউনিয়নের মধ্যে দুইটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়।

এর মধ্যে হযরতপুর ইউনিয়নের লংকারচর কেন্দ্রে ভোট গণনা নিয়ে কারচুপির অভিযোগে এ ইউনিয়নের নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানের নির্বাচনী এলাকা হযরতপুর। এককালে এই কেরানীগঞ্জকে  ‘ধানের শীষের দুর্গ’ বলা হত।

১৯৯১ সাল থেকে চারটি নির্বাচনে অবিভক্ত কেরানীগঞ্জ আসনটি ছিল ধানের শীষের দখলে। এই আসনে প্রতিবারই বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন আমান উল্লাহ আমান। আইনি জটিলতার কারণে তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। ওইসময়ের পর থেকে এখন পর্যলন্ত বিএনপির হাতছাড়া এই আসনটি।

নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও কামরুলের হাতে রয়েছে আসনটি। সাবেক খাদ্য মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের অনুসারী ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা হযরতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন। এবার ওই ইউনিয়নে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের মারপ্যাঁচে পড়ে তাকে মনোনয়ন না দিয়ে নৌকা প্রতীক দেয়া হয় মো. আনোয়ার হোসেন আয়নালকে।

নিজের ব্যক্তিগত ইমেজ আর জনগনের সমর্থনের চাপে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মো. আলাউদ্দিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলের প্রার্থীকে সমর্থন না দিয়ে উল্টো নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগ থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। একই ভাবে বহিস্কার করা হয় বাস্তা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জেড এ জিন্নাহকেও।

শুরু হয় নির্বাচনী প্রচারণা। সূচনা থেকে ভোট গ্রহণের দিন পর্যন্ত নানাভাবে চাপে রাখা হয় ঘোড়া মার্কা নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দাঁড়ানো স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আলাউদ্দিনকে।

১২ টি কেন্দ্রের ফলাফলের ভিত্তিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী আলাউদ্দিনকে ১৫০ ভোটের ব্যবধানে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু ষড়যন্ত্র শুরু হয় লঙ্কারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। গণনা শেষে সেখানে ৯৩৭ ভোটের এর মধ্যে ২৭ টি ভোট বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ২৭১ টি ভোট পান ঘোড়া প্রতীক। নৌকা পায় ৬২৩ টি,হাতপাখা পায় ১২ টি,মোটরসাইকেল ২ ভোট আর আনারস পায় ২ টি করে ভোট।

এ পর্যন্ত সবকিছুই ঠিকঠাক। প্রিজাইডিং অফিসারের আবুল কালাম স্বাক্ষর করে প্রার্থীদের এজেন্টদের কাছে ভোট গণনার বিবরনী দেয়ার পর এই হিসেবের বাইরে ওই কেন্দ্রে প্রাপ্ত জাল ১৯৭ টি ভোট নৌকা প্রতীকের সাথে যুক্ত করে কাল্পনিক ৪৬ ভোটের ব্যবধানে নিজেকে বিজয়ী দাবী করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আনোয়ার হোসেন আয়নাল।

হযরতপুর ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার তাইবুর রহমান জানান, তবে এর প্রিজাইডিং অফিসারের ফলাফল আমি গ্রহণ করি। তবে পরে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অন্য একটি তালিকা দেন। যাতে প্রথম ফলাফলের সঙ্গে দ্বিতীয় তালিকার ফলাফলের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। এজন্য আমরা এই অমীমাংসিত বিষয়টি সিদ্ধান্তের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেই সিদ্ধান্তই আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রকাশ করবো।

এদিকে এই কারচুপির প্রতিবাদে ভোটের পরদিন সকালে প্রকৃত ভোটে বিজয়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী আলাউদ্দিন শত শত সমর্থকরা ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। তারা কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস ঘেরাওয়ের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে তারা উপজেলার মূল ফটকের বাইরে গিয়ে মেইন রাস্তায় অবস্থান করে এবং ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদের দাবি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাজী আলাউদ্দিনকে কারচুরির মাধ্যমে পরাজিত দেখাতেই হয়রানিমূলকভাবে ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আব্দুল আজিজ জানান হযরতপুর ইউনিয়নে লংকারচর কেন্দ্রে ভোট গণনা নিয়ে মতানৈক্য দেখায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সমস্যাগুলো আবেদন আকারে পাঠানো হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান জানান,নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফলাফল নিয়ে কারচুপির কোন অবকাশ নেই।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানান,নির্বাচন কমিশনের গোচরে বিষয়টি এসেছে। তদন্ত করে দ্রুত সঠিক ফলাফল ঘোষণা করা হবে।

ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন