অনলাইন ডেস্ক । বাংলালাইভ২৪.কম |
বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতুর নিচ দিয়ে ইসলামপুর রোডে ঢুকতে একেবারেই বেগ পেতে হয়নি। চিরচেনা কোলাহল নেই। পাইকার কিংবা ক্রেতার ভিড়বাট্টা নেই। রিকশার টুংটাং, পথচলার ঝক্কি কিছুই নেই। সরু পথও যেন অনেক প্রশস্ত। কাপড়ের দোকানগুলো বন্ধ। তবে কিছু কিছু দোকানের সামনে মালপত্র নাড়াচাড়া করতে দেখা গেছে অনেক কর্মচারীকে। ঢাকার বাইরে পাঠানোর উদ্দেশ্যে বস্তাবন্দি করা হচ্ছিল এগুলো। বেশির ভাগই ছিল জাকাতের কাপড়। মঙ্গলবার সরেজমিন ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
রংধনু ফেব্রিক্সের সামনে একটি বস্তার ভেতরে ভাঁজে ভাঁজে কাপড় ঢুকাচ্ছিলেন কয়েকজন কর্মচারী। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ী জামিলুর রহমান বলেন, এখন ব্যবসা চলছে মোবাইল ফোনে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পাইকাররা মোবাইলে অর্ডার দেন। এরপর দোকান এবং গুদাম থেকে চাহিদামতো মালামাল বস্তায় বেঁধে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেন তারা। কয়েকদিন ধরেই মোবাইল ফোনে ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ সরাসরিও আসেন। তবে সেই সংখ্যা একেবারেই কম।
মুসা ম্যানসনের সামনে কথা হয় আরেক ব্যবসায়ী বশির আহাম্মদের সঙ্গে। তিনি জানান, সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই জাকাতের কাপড়ের চাহিদা বেশি। অর্ডার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাপড় পাঠানো হচ্ছে। ফোনে অর্ডার পেয়ে মালপত্র পাঠানোর জন্যই তিনি দোকান খুলেছেন।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাণিজ্য জমে উঠেছে পুরান ঢাকার আরেক ব্যস্ততম ব্যবসায়িক এলাকা নবাবপুরেও। হার্ডওয়্যার, টুলস এবং ইলেকট্রিকের এই পাইকারি মার্কেটে অন্য এলাকার তুলনায় বেশি জনসমাগম দেখা গেছে। দুপুর ১২টার দিকে এখানে রীতিমতো যানজট সৃষ্টি হয়ে যায়। কয়েকটি ফটকে ঝুলছিল ‘মার্কেট ১০ মে পর্যন্ত বন্ধ’ লেখা সাইনবোর্ড। তবে বেশির ভাগ মার্কেটের মূল ফটক (শাটার) নামিয়ে রাখা হলেও ভেতরে দোকান খুলে রাখতে দেখা গেছে।
জাবিন টাওয়ার মার্কেটের সামনে অপেক্ষমাণ বিক্রয়কর্মী ফারুক মিয়া, নওশাদ আলী এবং মুজিবুল হক জানান, কলকারখানার মালামালের চাহিদা বেড়েছে। অনেক ক্রেতা বিভিন্ন পণ্য চেয়ে ফোন করেন। কেউ সরাসরি এসে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন। তবে ফোনে অর্ডার পাচ্ছেন বেশি। যে কোনো পণ্য অর্ডার পেলে তারা ঠিকানামাফিক কুরিয়ারে পাঠাচ্ছেন। লেনদেন হচ্ছে ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে। পূর্বপরিচিত ক্রেতার ক্ষেত্রে লেনদেনের তেমন জটিলতা নেই।
টেলি-বাণিজ্য জমে ওঠার আঁচ লেগেছে কুরিয়ার সার্ভিস এবং বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির সামনে। বিকেল ৫টায় ধোলাইখাল এলাকায় গিয়ে পাওয়া গেল ইসলামপুর থেকে আসা কাপড়ের অনেকগুলো বস্তা। বগুড়া, কুষ্টিয়া, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে এসব পণ্য। শাপলা ট্রান্সপোর্টে দায়িত্বরত আবদুস সোবহান জানান, ইসলামপুর, নবাবপুর, নয়াবাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার পণ্য আসছে প্রতিদিনই। করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন সাধারণ ছুটি থাকলেও সম্প্রতি ট্রান্সপোর্টে পণ্য পরিবহন বেড়েছে।
ধোলাইখাল রোড হয়ে টিপু সুলতান রোডে গিয়ে দেখা যায়, মেশিনারিজ পার্টস তৈরির কারখানা খোলা। কারিগররা কারখানায় হাজির, মেশিনের চাকাও ঘুরছে। একটি কারখানার কর্মী মো. মানিক জানান, তার বাড়ি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায়। কারখানা চালু করা হয়েছে জানিয়ে কাজে ফেরার তাগাদা দিয়েছেন মালিক। সোমবার থেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন। করোনা ঝুঁকির মধ্যেও চাকরি বাঁচানোর জন্য কাজে ফিরেছেন বলে জানান এই কর্মী। একই বক্তব্য স্থানীয় আরও কয়েকজনেরও।