এক নারীর চাকরির বয়স বেড়েই যাচ্ছে। আর তা নিয়ে টেনশনের শেষ ছিলো না মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজের পরিচালনা কমিটির বিদ্যুতসাহী সদস্য ফারুক দেওয়ানের।
কিন্তু বিধি বাম। এক প্রভাষক প্রার্থীর ফোনালাপ ফাঁস হবার পর স্থগিত করা হয়েছে ওই নারীর নিয়োগ পরিক্ষা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলেজটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম।
পাশাপাশি পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী না থাকায় বাতিল করা হয়েছে সমাজ কর্ম ও ইংরেজী বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরিক্ষা-ও।
তবে হিসাব বিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগের নিয়োগ পরিক্ষা যথারীতি চলবে বলেও জানিয়েছেন পদাধিকার বলে কলেজটির সভাপতির চেয়ারে থাকা সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম।
আলোচিত ওই নারীর নাম খাদিজা নোমান সাথী। তিনি ওই কলেজেরই বাংলা বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক। স্থায়ী নিয়োগের জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ঘুরছিলেন ফারুক দেওয়ানের পেছনে।
সাথী ধামরাইয়ে স্বর্ণখালী গ্রামের খসরু নোমান ও ফেরদৌসী নোমান দম্পতির সন্তান।
স্বামী সাভারের ব্যবসায়ি। পার্ট টাইম রাজনীতির সাথেও জড়িত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, সকালে নিজের নিয়োগের বিষয়ে সাথী দেখা করতে যান ইউএনও অফিসে। তাকে ইউএনও অবস্থান জানিয়ে দেন কর্মকর্তারা। বলা হয়েছে,ব্যবস্থাপনা কমিটির পরবর্তী সভা ডেকে এ ব্যাপারে করনীয় নির্ধারণ করা হবে।
এই সাথীকে নিয়োগ স্থায়ী করা নিয়ে ফারুক দেওয়ান ওরফে ঝুট ‘দেওয়ানজির’ তৎপরতাকে সন্দেহের চোখে দেখেছেন অনেকে।
এ নিয়েই রয়েছে নানান গুঞ্জন। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে চাকরি পাকাপোক্ত করতে লেনদেন হয়েছে মোটা অংকের অর্থ।
এর মধ্যে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ঘুষের ১ লাখ টাকা নিয়েও কাজ করতে না পেরে ফেরত দিয়ে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন।
তবে যার এত টেনশন।তিনি ঘুষের অর্থ ফেরত দেননি এখনো। আর সেই অর্থ হালাল করতেই দৌড়ে বেড়িয়েছেন দ্বিগবিদিক। ওই নারীর চাকরি ‘পাকা’ করতেই আদাজল খেয়ে নামা দেওয়ান ফারুকের এমন তৎপরতায় ভিন্ন ইঙ্গিত দিয়েছেন কেউ কেউ।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার ওই কলেজের প্রভাষক পদের এক প্রার্থী গুরুতর অভিযোগ আনেন ফারুক দেওয়ানের বিরুদ্ধে।
বলেন, কেবলমাত্র সাথীর জন্যেই সমাজ কর্ম ও ইংরেজী বিষয়ে নিয়োগ বাদে বাংলা বিভাগের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছেন তিনি।
তারপর থেকেই দৃশ্যপট বদলে যায়।
ফারুক দেওয়ানের দাপুটে ও বিতর্কিত কর্মকান্ডের কাছে অসহায় কলেজটি।
সূত্রমতে, ফারুকই ছিলো ওই কলেজটিতে শেষ কথা। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কলেজের হিসাব শাখা থেকে নিজেই টাকা তুলে পকেটে ভরতেন।
তবে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের বেতন বিকাশে নেয়া শুরু হলে ফারুক দেওয়ান কাঁচা অর্থের উৎস বন্ধ হয়ে যায়।
তবে ভুয়া বিল ভাউচারে টাকা নেয়ার বিষয়গুলো বিবেচনা আনা হবে বলে জানান কলেজটির একটি সূত্র।
সাবেক একজন অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার মতো চালাক মানুষ আমি জীবনে দেখি নাই।
অবাক লাগে এটা ভেবে যে, কলেজ পরিচালনা পদের সদস্য হিসেবে কি এমন মধু আছে যে দশকের পর দশক ধরে তাকে এই পদে থাকতে হবে?
তিনি বলেন,মূলত স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশেই এই নিয়োগ দেয়া হয়।
ফারুক দেওয়ান প্রথমে বিএনপির তৎকালীন সংসদ সদস্য ডা.দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ এবং সর্বশেষ গত দুই মেয়াদে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা.এনামুর রহমানের সুপারিশেই এই পদে আসীন।
একজন মানুষ কতটা গিরগিটির মতো রং বদল করলে এভাবে সকল আমলে এই পদে থাকতে পারে – বুঝুন।
তাকে নিয়ে আর কি বলবো, ‘তিনি প্রয়োজনে আমার সাথে মিশেছেন আবার নিজের স্বার্থের কারনে আমার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের লেলিয়ে দিয়েছেন’- যোগ করেন ওই প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
এ বিষয়ে বর্তমান অধ্যক্ষ গোলাম আজম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছি। অর্থের বিনিময়ে কলেজে কাউকে নিয়োগ দেবার কোন সুযোগ রাখা হবে না।
এদিকে আমাদের হাতে আসা কল রেকর্ডে ফের সাথীকে নিয়ে উদ্বেগে প্রকাশ করেছেন ফারুক দেওয়ান।
গতকাল গভীর রাতে এক প্রার্থীকে নিজের মুঠোফোন নম্বর দিয়ে ফোন করে তিনি জানান, সাথীর বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই ওকে নিয়োগ দিতে খুব চেষ্টা করছি।
সূত্র মতে, সাথীকে নিয়ে ফারুক দেওয়ানের এমন প্রচেষ্টাকে দৃষ্টিকটু বলছেন অনেকে। আবার অনেকে বলাবলি করছেন,কিসের এমন সম্পর্ক যে সাথীর জন্যে এভাবে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন ফারুক দেওয়ান।
সূত্রমতে, কলেজের গর্ভনিং বডির সদস্য এই পরিচয় ছাড়া নিজের পরিচয় দেবার মতো তেমন কোন পরিচয় নেই তার।
ভাই পাথালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পারভেজ দেওয়ান এই পরিচয়ের সূত্রে ওই এলাকার বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় ঝুট বানিজ্যের জন্যে নিয়মিত তটস্থ করে রাখেন কর্মকর্তাদের।
ঝুট সন্ত্রাসের নেপথ্যে মদদদাতা হিসেবে গোয়েন্দাদের তালিকায় নাম থাকার বিষয়সহ আলোচিত বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য জানতে দফায় দফায় ফারুক দেওয়ানকে ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
যোগাযোগ করা হলে আলোচিত খন্ডকালীন শিক্ষক খাদিজা নোমান সাথী জানান,খন্ড কালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করলেও তাকে কোন বেতন দেয়া হতো না। বরং পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অর্থ-ও তাকে বহন করতে হয়েছে বলে অভিযোগ এই নারীর।