আরিফুজ্জামান উজ্জল, জাবি করেসপন্ডেন্ট । বাংলালাইভ২৪.কম |
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের ‘দুর্নীতির খতিয়ান’ প্রকাশ করেছে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ খতিয়ান প্রকাশ করেন তারা।
এ সময় দুইশত চব্বিশ পাতার এক সংকলন বইয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের নানা অনিয়ম, দুর্নীতির ও স্বেচ্ছাচারিতার তথ্য ও চিত্র তুলে ধরেন তারা।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের সংগঠক মুশফিক উস সালেহীনের সঞ্চালনায় উপাচার্যের দুর্নীতির ‘খতিয়ান’ প্রকাশকালে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রনু বলেন, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম নিয়মতান্ত্রিকভাবে অনিয়ম করে যাচ্ছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য একটা বড় বাজেট আসার পরেই উপাচার্যের আসল রুপ বেরিয়ে পড়ে। যখন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছে তখনি তিনি হামলা মামলা দিয়েছেন। গত ৫ নভেম্বরে উপাচার্যের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের এক অংশের হামলার পর উপাচার্য তার পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’
এ সময় তিনি উন্নয়ন প্রকল্পে উপাচার্যের আর্থিক দুর্নীতি, টেন্ডারে অনিয়ম, উপাচার্যের অতীত দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা এবং আন্দোলনকারীদের উপর উপাচার্যের ‘নির্দেশে’ ছাত্রলীগের হামলার নানান তথ্য তুলে ধরেন।
‘দুর্নীতিবিরোধী ইশতেহার’ পাঠকালে ছাত্রফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ বলেন, ‘আন্দোলনের বর্তমান এক দফা দাবি হলো দুর্নীতিগ্রস্থ উপাচার্যের অপসারণ। জাতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত স্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ এবং তার প্রেক্ষিতে উপাচার্যের নিস্ক্রিয়তা, ছাত্রলীগের একাধিক নেতার স্বীকারোক্তি, মাস্টারপ্ল্যানে দুর্নীতি সর্বোপরি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপরে এমন ন্যক্ক্যারজনক হামলা সংগঠিত করার পর উপাচার্য আর কোন ভাবেই তার পদে থাকতে পারেন না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর কোন ভিসি পতনের আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম না বরং উপাচার্যের অপসারণ আন্দোলনের একটি বিশেষ স্তরে আন্দোলনের মধ্যে থেকে উঠে আসা সর্বাত্মক কর্মসূচি মাত্র।’
এছাড়া তাদের ৭দফা প্রস্তাবনা সংবলিত ইশতেহার গুলো হলো, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সমস্ত প্রশাসনিক, একাডেমিক ও উন্নয়ন কর্মকান্ডের
অর্থনৈতিক হিসাব জনপরিসরে প্রকাশ করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন, সংশোধন এবং যে কোনো অবকাঠামোগত উন্নয়নে সকল অংশীজনের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যে কোনো
অবকাঠামোগত উন্নয়নে সর্বদলীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে তদারকি কমিটি সৃষ্টি করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অচলাবস্থা সৃষ্টি না হলে উপাচার্য তাঁর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ
করবেন না, উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করা হবে না, ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে সিনেট পূর্ণাঙ্গ করতে হবে, পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে ও সমস্ত বাণিজ্যিক কোর্স এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্থাপনার বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক সত্তা সমুন্নত রাখতে হবে।
দুর্নীতির খতিয়ান প্রকাশকালে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন, অধ্যাপক খবির উদ্দিন, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রনু, অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার, অধ্যাপক তারেক রেজা, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ প্রমুখ।
এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৪৪৫ কোটি টাকার অনুমোদন দেয় একনেক। এরপর থেকে মাস্টারপ্ল্যানের পুনর্বিন্যাস, টেন্ডারে আহ্বানে অস্বচ্ছতা সহ নানা অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। পরবর্তীতে নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে উপাচার্য অপসারণের এক দাবিতে আসেন আন্দোলনকারীরা। আর এ দাবিতে গত ৪ নভেম্বরে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে তার বাসভবনে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা।
পরবর্তীতে ছাত্রলীগের একটি অংশ হামলা চালায় আন্দোলনকারীদের উপর হামলায় শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কতৃপক্ষ তবে আন্দোলন বন্ধ না করে চলমান রেখেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলনকারীরা।