বাংলাদেশে তুলনামূলক ভাবে অন্যান্য দেশের চেয়ে এইডসে আক্রান্তের হার অনেক কম হলেও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলা দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর প্রায় তিন হাজার বাসিন্দা। সেই সাথে ঝুঁকিতে রয়েছে পল্লীতে আসা খদ্দেররা। অবাধ খোলা মেলামেশার জন্য যৌনকর্মী ও খদ্দেররা সহজেই এইডস রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে আশংকা করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে আসা খদ্দেরসহ পল্লীর তিন হাজার যৌনকর্মী মরণব্যাধি এইডসের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এখানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে আসা ট্রাক চালকসহ কয়েক হাজার খদ্দের এখানে প্রবেশ করে। অবাধ খোলামেলা মেলামেশার কারণে আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছে তারা।
পল্লীর একাধিক সূত্র জানায়, এখানে আসা বেশির ভাগ খদ্দেরই দৈহিক মিলনে কনডম ব্যবহারে অনাগ্রহী প্রকাশ করে থাকে। খদ্দেরদের ইচ্ছাপূরণ ও অধিক টাকার আশায় এখানকার যৌনকর্মীরারও প্রতিনিয়ত অনিরাপদ যৌন মিলন করে থাকে। তবে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সংগঠনের দাবি এখানে প্রতি মাসে যৌনকর্মীদের মাঝে প্রায় দেড় থেকে পৌনে দুই লাখ কনডম বিনামূল্যে বিতরণ করে থাকেন।
তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে ভিন্ন কথা। নিজেদের জীবনের নিরাপত্তার কথা না ভেবেই তারা ঝুঁকি নিচ্ছেন। তাছাড়া এখানে সুইয়ের মাধ্যমে খদ্দের ও যৌনকর্মীরা মাদক গ্রহণ করায়ও এইডস সংক্রমনের সম্ভাবনা রয়েছে। যা দেশের জন্য বড় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখানে তালিকাভুক্ত যৌনকর্মীর সংখ্যা রয়েছে ১ হাজার ৫২৬ জন। তাছাড়া এখানে বাবুর সংখ্যা রয়েছে ৫৬২ জন, বাড়িওয়ালি রয়েছে ২৮১ জন এবং শিশুর সংখ্যা রয়েছে ৬৫৩ জন। এর বাইরেও এখানে আরো বসবাস করছে কয়েক শত বয়স্ক নারী ও ব্যবসায়ী।
যৌনকর্মীদের সংগঠন “ অসহায় নারী ঐক্য” এর সভাপতি ঝুমুর আক্তার বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে সর্বশেষ এই পল্লীতে এইডস রোগী শনাক্তের জন্যে আইসিডিডিআরবি যৌনকর্মীদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিল। তার ফলাফল এখনো আমরা জানিনা। বৃহত্তর স্বার্থে এইচআইভি এবং এইডস আক্রান্ত শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরী।
গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসিফ মাহমুদ বলেন, দৌলতদিয়া যৌনপল্লী দেশের বৃহত্তর একটি যৌনপল্লী। এখানকার যৌনকর্মী ও খদ্দেররা মারাত্বক এইডস ঝুঁকিতে রয়েছেন। এখানে সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। সচেতন না হলে সারা দেশ ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে বলে জানান এই কর্মকর্তা।