মাত্র ৫ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। রক্ষণশীলতার বেড়াজাল ডিঙিয়ে বড়পর্দায় মুখ দেখানোই ছিল একমাত্র স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন দেখা যত সহজ, তা বাস্তবায়িত করা ততটাই কঠিন। মায়ানগরীতে পা রেখেই সেই উপলব্ধি হয়েছিল নোরা ফতেহির। এতটাই অপদার্থ প্রতিপন্ন করা হয় তাঁকে যে, এক কাস্টিং ডিরেক্টরের অফিস থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসতে হয়।
নয় নয় করে ৬ বছর মায়ানগরীতে কাটিয়ে ফেলেছেন নোরা। আজ যত বড় ব্যানারের ছবিই হোক না কেন, অন্তত একটা দৃশ্যেও তাঁকে রাখা চাই-ই পরিচালকের। কিন্তু এই সাফল্যে পেতে কম ঝড় ঝাপটা পোহাতে হয়নি তাঁকে। তাই সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও অতীতের সেই দিনগুলি ভোলেননি তিনি। করিনা কপূরের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় নিজের মনের সেই দিকটাই মেলে ধরলেন নোরা।
জীবনে অনেকের কাছেই আঘাত পেয়েছেন নোরা। অনেকেই চরম অপমান করেছেন তাঁকে। তাতে মনের উপর দিয়ে কী ঝড় ঝাপটা গিয়েছিল, তা নিয়ে বরাবরই অকপট নোরা। কিন্তু দুর্ব্যবহারকারীর নাম কখনও খোলসা করেননি তিনি। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি।
নোরা জানিয়েছেন, বাড়ির মেয়ে সিনেমায় কাজ করবে, ব্যাপারটা কখনও মেনেই নিতে পারেনি তাঁর পরিবার। কিন্তু বড়পর্দার হাতছানি এড়াতে পারেননি তিনি। তাই একরকম পালিয়েই এসেছিলেন মুম্বইয়ে। ভেবেছিলেন, খোঁজ খবর নিতে শুরু করলে একটা না একটা সুযোগ এসেই যাবে।
তাই বলিউডের এক নামজাদা মহিলা কাস্টিং ডিরেক্টর নিজে থেকে ফোন করায় হাতে প্রায় চাঁদ পেয়েছিলেন নোরা। এক ডাকেই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে যে কী ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি।
নোরা জানিয়েছেন, ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ভয়ঙ্কর অপমান করেন ওই কাস্টিং ডিরেক্টর। মহিলা হিসেবে আর এক জন মহিলাকে যে ন্যূনতম সম্মানটুকু জানানো উচিত, তার ধারও ধারেননি তিনি। বরং তাঁর উপর রীতিমতো চিৎকার করতে থাকেন ওই কাস্টিং ডিরেক্টর। সেই সঙ্গে ফুলঝুড়ির মতো গালিগালাজ।
নোরা জানিয়েছেন, তাঁর অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নে জল ঢেলে দেন ওই কাস্টিং ডিরেক্টর। জানিয়ে দেন, তাঁর মতো হাজার হাজার মেয়ে রোজ এই শহরে ভিড় করেন। কিন্তু এঁদের বেশির ভাগেরই কোনও প্রতিভা নেই। নোরাও তাঁদের মতোই এক জন। অভিনেত্রী হওয়ার জন্য যে ‘এক্স ফ্যাক্টর’ লাগে, তার ছিটোফোঁটাও নেই তাঁর মধ্যে। এই ধরনের মেয়েদের বোঝা বইতে বইতে ক্লান্ত ইন্ডাস্ট্রি। ইন্ডাস্ট্রির এঁদের প্রয়োজনই নেই।
ওই মহিলা কাস্টিং ডিরেক্টর যে এ ভাবে তাঁর মনোবল ভেঙে দিতে পারেন, তা কল্পনাও করতে পারেননি নোরা। কোনও রকমে ধন্যবাদ জানিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু রাস্তায় বেরিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন। ব্যর্থতার ভয় চেপে ধরে তাঁকে। দিশেহারা হয়ে পড়েন। কিন্তু ফিরে যাওয়ার রাস্তা ছিল না। তাই স্বপ্নপূরণের জেদ নিয়েই এগোতে থাকেন।